আমরা গ্রামের পুকুরে কিভাবে অল্প খরচে মাছ চাষ করতে পারি
মাছ চাষের পূর্বশর্ত কুকুর নির্বাচন ও পুকুর প্রস্তুতিঃ
মাছ চাষ করার জন্য প্রথমে আপনাকে উপযুক্ত পুকুর নির্বাচন করতে হবে। তারপর আপনাকে মাছের প্রজাতি নির্বাচন করতে হবে যেমন আপনি কোন মাছ চাষ করতে চাচ্ছেন। আপনাকে সব সময় সচেতন থাকতে হবে মাছের যত্ন নিয়ে।
মাছকে নিয়মিত খাবার দিতে হবে, মাছের রোগ হয়েছে কিনা তা চিকিৎসা করতে হবে, কিছুদিন পরপর মাছ ধরা থেকে বিরত থাকতে হবে। নিয়মিত মাছের দিকে নজর দিতে হবে। যে সকল মাছের প্রচুর চাহিদা রয়েছে বাজারে সেগুলো চাষ করতে হবে।
নিজেকে সবসময়ই প্রস্তুত থাকতে হবে বাণিজ্যিকভাবে মাছ চাষের জন্য ।
প্রত্যেক মানুষের জন্য মাছ হচ্ছে আমিষের অন্যতম উৎস।
চাষ উপযোগী মাছ কোনগুলো ও উপকারিতাঃ
বর্তমানে বাংলাদেশে অনেক প্রজাতির মাছ রয়েছে তবে চাষযোগ্য মাছগুলো হল - কালিবাউস, সিলভারকার্প, রুই, কাতলা, মৃগেল, গ্লাসকার্প, মিররকার্প, কমনকার্প, বিগহেড, রাজপুটি, তেলাপিয়া, বিদেশি মাগুর, থাই পাঙ্গাস ইত্যাদি। এ মাছগুলোর প্রচুর পরিমাণে চাহিদা রয়েছে মানুষের কাছে এবং এগুলো খেতে অত্যন্ত সুস্বাদু ও রুচিসম্মত।
এইসব মাছের অনেক গুনাগুন রয়েছে-এই মাছগুলো অনেক দ্রুত বেড়ে ওঠে, জায়গা ও খাদ্যের জন্য একে অপরের সাথে প্রতিযোগিতা করে না সকলে একত্রিত থাকে,এ সকল মাছ পানির সব স্তর থেকে খাবার গ্রহণ করে থাকে।
এই মাছগুলো কখনো পুকুরের পরিবেশ নষ্ট করে না তাই পুকুরের পরিবেশও ভালো থাকে, এগুলো খুব কম আক্রান্ত হয় রোগে এবং অতি দ্রুত এগুলো চিকিৎসা করা যাই, এ সকল মাছ পুকুরে অনেক বেশি সংখ্যায় চাষ করা যায়। সর্বপ্রথম আমাদের পুকুর প্রস্তুত করে নিতে হবে মাছ চাষের জন্য।
মাছ চাষ করার জন্য পুকুর প্রস্তুতি কারাঃ
1. সর্বপ্রথম পুকুরের পাড় ও তলা মেরামত করতে হবে।
2. পুকুর পাড়ে কিছু রাখা যাবে না ঝোপ জঙ্গল থাকলে তা পরিষ্কার করে ফেলতে হবে।
3. পুকুরে যদি কোন রাক্ষুসে মাছ থাকে তাহলে তা পুকুর থেকে তুলে ফেলতে হবে।
4. বারবার জাল টানা ও কুকুর শুকানো।
5. ঔষধ প্রয়োগ করা যেমন রোটেন, পরিমাণ ২৫-৩০ গ্রাম ও এর মেয়াদ ৭-১০ দিন।
6. পুকুর কে সব সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে কোন আবর্জনা ফেলা যাবে না।
নতুন পুকুরে সার প্রয়োগঃ
- নতুন পুকুরে অবশ্যই সার প্রয়োগ করতে হবে।
- শতাংশ প্রতি গোবর প্রয়োগ করতে হবে ৫-৭ কেজি।
- ইউরিয়া প্রয়োগ করতে হবে ১০০-১৫০ গ্রাম।
- ডিএসপি প্রয়োগ করতে হবে ৫০-৭০ গ্রাম।
সাধারণভাবে পুকুরের মাছ চাষ পদ্ধতিকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়ঃ
১. সনাতন পদ্ধতিতে মাছ চাষ।২. নিবিড় পদ্ধতিতে মাছ চাষ।
৩. আধা নিবিড় পদ্ধতিতে মাছ চাষ।
বাণিজ্যিকভাবে মাছের চাহিদা রয়েছে যেগুলোরঃ
পুকুরে কখনোই রাক্ষুসে মাছ রাখা যাবে না। যে সকল মাছ চাষ করতে হবে- কালিবাউস, সিলভারকার্প, রুই, কাতলা, মৃগেল, গ্লাসকার্প, মিররকার্প, কমনকার্প, বিগহেড, রাজপুটি, তেলাপিয়া, বিদেশি মাগুর, থাই পাঙ্গাস ইত্যাদি।পুকুরে রাক্ষুসে মাছ থাকলে অন্যান্য মাছগুলোকে খেয়ে ফেলবে মাছের পরিমাণ কমে যাবে।আমাদের কখনোই উচিত নয় পুকুরে রাক্ষুসে মাছ ছাড়া, অনেকে আমরা বুঝিনা কোনগুলো রাক্ষুসে মাছ। সেজন্য আপনাকে আগে পরামর্শ নিতে হবে তারপরে পুকুরে মাছ ছাড়তে হবে।
পুকুর চাষ করার জন্য পুকুর নির্বাচন করতে হবেঃ
১. পুকুরটি অবশ্যই বাড়ির আশেপাশে হতে হবে এবং খোলা জায়গায়।
২. কুকুরের জন্য মাটির গুনাগুন খুব গুরুত্বপূর্ণ যেমন সাধারণত দো-আঁশ, এঁটেল দো-আঁশ ও এঁটেল মাটি পুকুরের জন্য ভালো।
৩. পুকুরের আয়তন কমপক্ষে ১০ শতাংশ হতে হবে। মাছ চাষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ আয়তন হচ্ছে ৩০ শতাংশ থেকে ১ একর আকারের পুকুর।
৪. পুকুরের গভীরতা অবশ্যই দুই থেকে তিন মিটার রাখতে হবে।
৫. পুকুরের পাড়ে কোন জঙ্গল বা বড় গাছ থাকা যাবে না।
৬. পুকুর কে সবসময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে এবং পুকুরের প্রতি যত্নশীল হতে হবে।
মাছ চাষে সতর্কতাঃ
যে মাছগুলোতে রোগ খুব কম হয় সেগুলো চাষ করতে হবে। নিয়ম অনুযায়ী সঠিক সংখ্যায় পোনা মজুদ করতে হবে। পোনা ছাড়ার আগে পোনা রোগে আক্রান্ত কিনা তা পরীক্ষা করতে হবে। পুকুরে যাতে কোন আগাছা না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। নিয়মিত ৩-৪ বছর পর পর পুকুর শুকিয়ে ফেলতে হবে
মাছের প্রক্রিয়াজাতকরণঃ
মাছের প্রক্রিয়া জাতের সময় হাত দিয়ে বেশি ঘাটাঘাঁটি করা যাবে না বা বেশি নাড়াচাড়া করা যাবে না এবং মাছ ধরার পর মাছের সাইজ অনুযায়ী আলাদা করে ফেলতে হবে।
মাছের পরিচর্যাঃ
অনেক সময় দেখা যায় বর্ষার শেষে পুকুরের পানিতে সবুজ বা লাল রস পড়ার সাথে সাথে তা তুলে ফেলতে হবে। কখনো যদি পানির সবুজভাব কমে যায় তাহলে অবশ্যই পরিমাণ মতো ছাড় দিতে হবে। মাঝে মাঝে পুকুরে হুররা টানতে হবে এবং মাঝে মাঝে জাল টেনে মাছের অবস্থা দেখতে হবে। কয়েক মাস পর পর পুকুরে জাল টানা ভালো কিন্তু অতিরিক্ত জাল টানা কখনোই ভালো না, অতিরিক্ত জাল টানলে মাছের ক্ষতি হয় এবং বৃদ্ধি কমে যায়।
নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url