পুঁই শাকের উপকারিতা ও অপকারিতা [বিস্তারিত দেখুন]
পুঁইশাক একটি জনপ্রিয় সুস্বাদু ও পুষ্টিকর খাবার। শরীরে শক্তি যোগাতে পুঁইশাক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যা সারা বছর পাওয়া যায়। সাধারণত দুই রঙ্গের পুঁইশাক হয়ে থাকে সবুজ ও লাল।
পুঁইশাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, ক্যালসিয়াম এবং আয়রন রয়েছে। শরীরকে সুস্থ রাখতে পুঁইশাক অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। পুঁইশাক ওজন কমাতে সাহায্য করে ও ত্বকের সৌন্দর্য বাড়ায়।
পোস্ট সূচিপত্রঃপুঁই শাকের উপকারিতা ও অপকারিতা
পুঁইশাক কি
লতা জাতীয় উদ্ভিদ হচ্ছে পুঁইশাক। পুঁইশাকের ডাল ও পাতা দুটোই রান্না করে খাওয়া যায়। বাজারে সব সময় পুইশাকে চাহিদা প্রচুর পরিমাণে থাকে। দেশে ও বিদেশে পুইশাকের জনপ্রিয়তা অনেক সুস্বাদু ও পুষ্টিকরের কারণে।
পুঁইশাক যে কোন খাদ্যের সাথে খাওয়া যায়। রোগ প্রতিরোধ থেকে মুক্তি পেতে যেমন পুইশাক সাহায্য করে তেমনি ত্বকের ও চুলের সৌন্দর বাড়িয়ে থাকে। দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় পুঁইশাক থাকা বা সবুজ শাকসবজি থাকা অতি প্রয়োজন।
পুঁইশাকের উপকারিতা কি কি
- ছোট বাচ্চাদের জন্য পুঁইশাক অত্যন্ত উপকারী। নিয়মিত পুঁইশাক ছোট বাচ্চাদের খাওয়ালে তাদের বুদ্ধি বাড়াতে সাহায্য করে। একটি শিশু বেড়ে ওঠার জন্য যা প্রয়োজন তার সবকিছু রয়েছে এই পোশাকের মধ্যে।
- চোখের সমস্যার জন্য পুঁইশাক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পুঁইশাকের মধ্যে রয়েছে বিটা ক্যারোটিন ও লোটেন যা চোখের সমস্যা দূর করবে। চোখের আলো বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে এই পুঁইশাক।
- যাদের শরীরের যে কোন জায়গার ব্যথা ভালো হয় না তাদের জন্য পুঁইশাক অত্যন্ত উপকারী। নিয়মিত পুঁইশাক খাওয়ার মাধ্যমে আপনার শরীরের ব্যথা দূর হয়ে যাবে। অনেকের মাথা ব্যথা, মাজা ব্যথা, ঘাড়ে ব্যথা, হাঁটুতে ব্যথা, এই ব্যাথা দূর করার জন্য পুঁইশাক কার্যকরী।
- পুঁইশাকের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে লিপয়িক এসিড রয়েছে যা রক্তের শর্করার মাত্রা কমার পাশাপাশি ইনসুলিনের ধরে রাখতে পারে।
- যাদের শরীর অত্যন্ত দুর্বল তাদের জন্য এই পুঁইশাক এর অনেক উপকারিতা রয়েছে। পুঁইশাকে ম্যাগনেসিয়াম থাকার কারণে শরীরকে এনার্জি পেতে সাহায্য করে ।
- শরীরে সৌন্দর্য ধরে রাখতে পুঁইশাক এর বিকল্প নেই। দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় আমাদের কিছু শতাংশ পুইশাক ও অন্যান্য শাক সবজি রাখা উচিত।
- অ্যাজমা প্রতিরোধে কার্যকর পুঁইশাক। যাদের অ্যাজমার সমস্যা রয়েছে তারা নিয়মিত পুঁইশাক খেলে খুব অল্প সময়ে অ্যাজমার সমস্যা থেকে মুক্তি পেয়ে যাবেন।
- উচ্চ রক্তচাপ কমাতে পুঁইশাক প্রয়োজন। নিয়মিত পুঁইশাক খেলে উচ্চ রক্তচাপ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। পুঁইশাক হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
- পুঁই শাকের মধ্যে রয়েছে ক্লোরোফিল যা সব ধরনের সবুজ শাকসবজিতে থেকে থাকে। মানব দেহের জন্য পুঁইশাক খুবই উপকারী। পয়সা ক্যান্সার কে দূরে রাখতে সাহায্য করে এবং অনেক মারাত্মক রোগ থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করে।
- মানব দেহের হাড়ের জন্য পুঁইশাক অত্যন্ত উপকারী। যাদের হাড়ের সমস্যা রয়েছে তাদের হাড়ের সমস্যা সমাধানের জন্য এ পয়সা অত্যন্ত কার্যকরী একটি সবজি। পুঁইশাক ভিটামিনের অভাব ও ক্যালসিয়ামের অভাব পূরণ করে থাকে।
- কোষ্ঠকাঠিন্যর সমস্যা থেকে সমাধান দিয়ে থাকে পুঁইশাক। পুঁই শাকের পুষ্টিগুণ অনেক পরিমাণে রয়েছে যা শরীরকে সতেজ রাখতে সাহায্য করে।
- পুঁইশাক চুলপড়া কমাতে ও চুলকে মজবুত রাখতে সাহায্য করে। বর্তমানে অনেকের চুলের সমস্যা রয়েছে এই সমস্যা থেকে সমাধান পাওয়ার জন্য নিয়মিত খাদ্য তালিকায় পুঁইশাক রাখা অত্যন্ত জরুরী।
- ব্রণ এর সমস্যা সমাধানে পুঁইশাক একটি কার্যকারী সবজি। ব্রণ হওয়ার একমাত্র কারণ হচ্ছে অতিরিক্ত তেল যা এই পুঁইশাক দূর করে থাকে। ব্রণ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য পুইশাকের উপকারিতা অনেক রয়েছে।
- পাইলসের সমস্যা সমাধানে পুঁইশাক খাওয়া প্রয়োজন। ডাক্তারি পরামর্শ অনুযায়ী পাইলসের সমস্যার সমাধান করার জন্য নিয়মিত পুঁইশাক খাওয়ার নির্দেশ করে থাকেন।
- শারীরিক সমস্যা দূর করতে পুঁইশাক এর উপকারিতা অনেক রয়েছে যার ফলে সবুজ শাকসবজি খাওয়া অতি প্রয়োজন। সবুজ শাকসবজি মধ্যে ভিটামিন,ক্যালরি ও আয়োডিন রয়েছে যার ফলে খুব অল্প সময়ে শারীরিক সমস্যা দূর করতে সক্ষম।
পুঁই শাকের অপকারিতা কি কি
ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী যাদের যৌন সমস্যা রয়েছে তারা নিয়মিত পুঁইশাক খাওয়া থেকে বিরত থাকাই ভালো। পুঁইশাক খাওয়ার ফলে শরীরের তরল পদার্থের অক্সাইডের পরিমাণ অনেক বেড়ে যায়। যার ফলে অল্প বয়সেই বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা দেখে যেতে পারে।
কিডনিতে পাথর হওয়া থেকে বাঁচতে অতিরিক্ত পরিমাণে পুঁই শাক খাওয়া যাবেনা। পুঁইশাক কিডনিতে পাথর হতে সাহায্য করে। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী পুঁইশাক খেতে হবে যাদের কিডনিতে সমস্যা রয়েছে । কিডনিতে সমস্যা থাকলে অতিরিক্ত পুঁইশাক খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
খাদ্য তালিকায় পুঁইশাক রাখা ভালো কিন্তু অতিরিক্ত পুঁইশাক রাখা কখনো ভালো নাই কেননা এটি একাধারে অনেকদিন খাওয়ার ফলে শরীরের নানান সমস্যা হয়ে থাকে।
নিয়মিত পুঁইশাক রাত্রে খেলে শরীরের তরল পদার্থের অক্সাইডের এর পরিমাণ বেড়ে যায়, যার কারণে শরীরে গ্যাস্ট্রিক এর সমস্যার পাশাপাশি আরো অনেক সমস্যা হয়ে থাকে।
পুঁইশাক রান্না করার আগে ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিতে হবে এবং নিয়ম মাফিক রান্না করতে হবে কখনোই বেশি ভাজা-ভাজি করা যাবে না যার ফলে পুঁইশাকের গুণগত মান নষ্ট না হয়।
পুঁইশাকের উপাদান কি কি
ভিটামিন এ: ১৭০ I.U
ভিটামিন সি: ৫১.৮ মিলিগ্রাম
শর্করা: ২.১ গ্রাম
ক্যালোরি: ২৫ কিলোক্যালরি
পানি: ৯১.৮ গ্রাম
প্রোটিন: ২.৪ গ্রাম
ফ্যাট: ০.৩ গ্রাম
পুঁইশাক খাওয়া প্রোয়োজন কেন
আমাদের বাড়ির আশেপাশে পুঁইশাক প্রচুর পরিমাণে হয়ে থাকে। আমাদের বাড়ি যে কোন জায়গায় এ পুঁইশাক লাগানো যায় যা খুব অল্প সময়ে বড় হতে থাকে।
যার ফলে আমাদের খাদ্য তালিকায় প্রয়োজনীয় পুষ্টি পূরণ করে থাকে। পুঁইশাক মানব দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে থাকে। একজন মানুষকে সুস্থ থাকার জন্য খাদ্য তালিকায় শাকসবজি থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
দৈনন্দিন জীবনে খাদ্য তালিকায় পুঁইশাক বা সবুজ শাকসবজি না থাকলে মানবদেহের রোগব্যাধি বৃদ্ধি পায় এবং শরীর অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়ে। শরীরকে সতেজ রাখতে নিয়মিত পুঁইশাক খাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী একজন মানুষকে সুস্থ থাকার জন্য খাদ্য তালিকায় নিয়মিত বৈশাখের চাহিদা অনেক রয়েছে। বৈশাখ বা সবুজ শাকসবজি খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে যার ফলে শরীরের কোষ সমূহ সতেজ ও সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
পুঁইশাকের ছবি
পুঁই শাক খেলে কি গ্যাস হয়
পুঁইশাক খেলে কোন গ্যাসের সমস্যা হয় না কিন্তু নিয়মিত রাত্রে পুঁইশাক খাওয়া যাবে না। যাদের গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা ও বাতের ব্যথা রয়েছে তারা নিয়মিত এই পুঁইশাক খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন।
বর্তমানে মানবদেহে রোগ এর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে যার ফলে কোন কিছু খাওয়ার আগে বিবেচনা করে খাওয়া উচিত। অনেকের অনেক রোগ হয়ে থাকে যার ফলে পুঁইশাক খাওয়া নিষেধ যেমন অতিরিক্ত ঠান্ডা লাগলে।
মানবদেহে ঠিক রাখার জন্য পুঁইশাক খাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু কিছু কিছু রোগের জন্য এই পুঁইশাক খাওয়া থেকে বিরত থাকাই ভালো ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী।
পুইশাকের বিচি
পুইশাকের পাশাপাশি পুইশাকের বিচিরও অনেক উপকারিতা রয়েছে। পুরুষের জন্য পুঁইশাকের বিচি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ পুইশাকের বিচি খেলে শুক্রানুর পরিমাণ অনেক বেড়ে যায়। বাড়ির আশেপাশে পুইশাকের বিচি ফেলে দিলে এমনিতেই গাছ হয়ে যায়।
কোষ্ঠকাঠিন্য মত রোগ দূর করতে পুঁইশাকের বিচি অত্যন্ত কার্যকর। পুঁইশাক ও পুঁই শাকের বিচি যেকোনো তরকারি সাথে খাওয়া যায় এবং এমনিতেও রান্না করে খাওয়া যায়। পুঁইশাকের বিচি পেকে গেলে লাল রঙের হয়ে যায় অনেকটা।
পুঁই শাকের সাথে এই পুঁইশাকের বিচি অনেকে খেয়ে থাকে যার উপকারিতা অনেক রয়েছে। পুঁইশাকের বিচি একটি সুস্বাদু ও পুষ্টিকর খাবার।
কেন পুঁইশাক খাওয়া প্রয়োজন
গর্ভবতী অবস্থায় পুঁইশাক খাওয়া খুবই প্রয়োজন এবং এই পুঁইশাক খাওয়ার অনেক উপকারিতা রয়েছে।
পুঁইশাক হার কে মজবুত করে থাকে। কিডনির সমস্যা দূর করতে ও ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে পুঁইশাক।
চুলকে ঘন ও লম্বা করতে সাহায্য করে পুঁইশাক। চুলের গোড়া শক্ত করতে পুঁইশাকের উপকারিতা অনেক রয়েছে। ত্বকের সৌন্দর্যের জন্য লাল শাক নিয়মিত খাওয়া উচিত।
শরীরে রক্তের সমস্যা থাকলে অতি অল্প সময়ে এই পুঁইশাক খাওয়ার মাধ্যমে অক্ষের সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। রক্তকে পরিষ্কার করতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে এই পুঁইশাক।
সবুজ শাকসবজির মাঝে অন্যতম হচ্ছে পুঁইশাক যা সকল মানুষ খেতে পছন্দ করে ও খেয়ে থাকে। শরীরের রোগ দূর করতে পুঁইশাক খাওয়া অতী প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
কিভাবে পুঁইশাক চাষ করতে হয়
প্রথমে উপযুক্ত জমি তৈরি ও চারা রোপন করতে হবে। পুঁই শাকের চাষের জন্য সার প্রয়োগ করতে হবে এবং সেচ ও পানি নিষ্কাশন করতে হবে। পুইশাকের গাছের আগাছা পরিষ্কার করা লাগবে তারপর পোকামাকড় ও রোগ দমন করতে হবে। এবার ফসল সংগ্রহ করতে হবে।
পুঁইশাক চাষ করার জন্য প্রথমে জমি নির্বাচন করতে হবে এবং জমিটি অবশ্যই উর্বরতা হতে হবে। পুঁই শাকের জমিতে অতি শতকে ৮ থেকে ১০ গ্রাম বীজ লাগবে চারা তৈরির জন্য। চারা না বললে আপনাকে পুঁইশাকের চারা রোপণের জন্য উন্নত মানের চারা কিনতে হবে।
চারা রোপনের জন্য শাড়ি থেকে শাড়ির দ্রুত ১ মিটার হবে এবং প্রতিটি শাড়িতে ৫০ সেন্টিমিটার দূরে দূরে নির্ধারিত স্থানে চার রোপন করতে হবে। প্রথম ইউরিয়া সার প্রয়োগ করতে হবে চারার বয়স যখন ১০ থেকে ১২ দিন হবে। তারপর পরবর্তীতে ৩০ থেকে ৪০ দিন পর একবার এবং ফসল তোলার পর একবার মোট তিনবার সার প্রয়োগ করতে হবে।
নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url