মাজরা পোকা মারার বিষের নাম
বর্তমানে বাংলাদেশে হলুদ মাজরা পোকা,কালো মাথা মাজরা পোকা, গোলাপি মাজরা পোকা এই তিন ধরনের মাজরা পোকা ফসলের ক্ষতি করে থাকে।মাজরা পোকা ফসলের জন্য অতান্ত ক্ষতিকর।
মাজরা পোকা দমনের জন্য আমাদের সর্বাধুনিক প্রযুক্তির সিস্টেমিক কীটনাশক ব্যবহার করতে হবে। মাজরা পোকা কেবল রাতের অন্ধকারে চলাফেরা করে এবং দিনের বেলায় মাজরা পোকা পাতার নিচে লুকিয়ে থাকে।
পোস্ট সূচিপত্রঃমাজরা পোকা মারার বিষের নাম
মাজরা পোকার আক্রমণের পূর্বে করণীয়
১. নির্দিষ্ট দূরত্ব অনুযায়ী চারা রোপন করতে হবে।
২. চারা লাগানোর পরপরই জমিতে নির্দিষ্ট পরিমাণে খুঁটি দিতে হবে, যাতে প্রতিদিন পাখি বসতে পারে এবং পোকা খেয়ে ফেলতে পারে।
৩. একটি নির্ধারিত বয়সের সঠিক চারা রোপন করতে হবে।
৪. সার প্রয়োগের জন্য মাটি পরীক্ষা করে নিতে হবে প্রথমে।
ধানের প্রধান শত্রু কোন পোকা
ধানের প্রধান সূত্র হলো হলুদ মাজরা পোকা। ধানের ক্ষতি করার জন্য মাজরা পোকার বিপরীত কোন পোকা নেই। নিমিষেই ধানের ক্ষতি করে ফেলে এই হলুদ মাঝরা পোকা। ধানের হলুদ মাঝরা পোকা থেকে বাঁচার জন্য আমাদেরকে কীটনাশক বা বিশ ব্যবহার করা অতি প্রয়োজন।
ফসলের জন্য মাজরা পোকার পাশাপাশি আরো অনেক ধরনের পোকা রয়েছে যার ফলে ফসল নষ্ট হয়ে যায়। পোকামাকড় থেকে ফসল কে বাঁচানোর জন্য নিয়মিত সার ও কীটনাশক ব্যবহার করতে হবে। ফসলের জন্য ক্ষতিকারক পোকা গান্ধী পোকা, পামরি পোকা, লেদা পোকা, ঘাস ফড়িং ইত্যাদি।
ফসল ভালো করার জন্য নিয়মিত ফসলের জমি দেখাশুনা করতে হবে এবং কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শ অনুযায়ী বিশ ও সার প্রয়োগ করতে হবে। সাধারনত পোকামাকড় আক্রমণ করে ফসলের ডালে বা ডগায় যার ফলে গাছটি দুর্বল হয়ে যায়। ফসলের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর হচ্ছে পোকা।
মাজরা পোকার আকার আকৃতি
মাজরা পোকা প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ ও স্ত্রীর মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে। প্রাপ্তবয়স্ক স্ত্রী পোকার গায়ের রং হালকা হলুদ হয়ে থাকে এবং স্ত্রী মাঝরা পোকার ডানার উপর দুটি পরিষ্কার কালো বিন্দু থাকে। মাজরা পোকা প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ হলে হালকা বাদামি রংয়ের হয়ে থাকে সাধারনত।
প্রাপ্তবয়স্ক গুলোর সামনে ডানার শুরুতেই অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ধূসর বর্ণের চিহ্ন দাগ থাকে। প্রাপ্তবয়স্ক মাজরা পোকার মথগুলো অনেক টা লম্বা হয়ে থাকে এবং মাজরা পোকা সলের জমিতে রাতে দেখা যায়।
মাজরা পোকার ডিম
সন্ধ্যার পর থেকে সক্রিয় হয়ে উঠে প্রাপ্তবয়স্ক স্ত্রী ও পুরুষের মত। প্রাপ্তবয়স্ক স্ত্রী ও পুরুষ মাজরা পোকার মতের যৌন মিলন ঘটে কেবল রাত্রে। স্ত্রি সাধারনত ডিম পাড়তে শুরু করে মিলনের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে।
একটি স্ত্রী মত সাধারণত ধানের পাতার উপরে ডিম পেড়ে থাকে এবং ৩-৭ টি গুচ্ছে ডিম পাড়ে। প্রাপ্তবয়স্ক স্ত্রী মাজরা পোকা প্রতিটি গুচ্ছে ৫০ থেকে ৮০ টি ডিম থাকে। একটি স্ত্রী মাজরা পোকা সর্বমোট ডিম পাড়তে পারে ১০০ থেকে ৩০০ টি।
মাজরা পোকা যেসব ক্ষতি করে থাকে
মাজরা পোকা পাতার উপরে ও নিচে ডিম পাড়ে। ডিম ফুটে বের হওয়ার ফলে আস্তে আস্তে কাণ্ডের ভিতরে প্রবেশ করে এবং ভিতরে যাওয়ার পরে নরম অংশ পুরোটা খায় যা ফসল কে নিমিষেই শেষ করে ফেলে।
গাছের ডিগ ও পাতার গোড়া খেয়ে ফেলার কারণে ডিগ টি মারা যায়। মাজরা পোকা ধানের শীষ ফোটার আগেও আক্রমণ করে এবং ধানের শীষ ফোটার পরও আক্রমণ করে থাকে। মাজরা পোকা শিষ আসার পর আক্রমণ করলে সম্পূর্ণ শুকিয়ে যায় ফসলটি।
মাজরা পোকা দমন
মাজদা পোকার জন্য বেল্ট এক্সপার্ট উপযোগী কীটনাশক। প্রতি লিটার পানিতে ০.৫ মিলিগ্রাম প্রতি একরে ১০০ মিলিগ্রাম কীটনাশক ব্যবহার করতে হবে। আবার মাইনেকটো এক্সট্রা ব্যবহার করা যেতে পারে যা মাজদা পোকা দমনের জন্য উপযোগী।
মাজদা পোকা দমনের জন্য দ্বিতীয়বার কীটনাশক প্রয়োগ করতে হবে ৪৫ থেকে ৫০ দিন পর। এছাড়াও আরো কিছু কীটনাশক রয়েছে যা প্রয়োগের মাধ্যমে মাজদা পোকার দমন থেকে ফসল কে বাঁচানো যায়।
মাজদা পোকার দমন না করা হলে সাধারণত ১৩ থেকে ২৬ ভাব ফসল নষ্ট করে ফেলবে এবং অতিরিক্ত আক্রমণের ফলে ৩০ থেকে ৭০ ভাগ পর্যন্ত ফসল নষ্ট করে ফেলতে পারে। এই মাজদা পোকা একবার ধান গাছে আক্রমণ করলে সহজে তা থেকে রক্ষা পাওয়া যায় না।
মাজরা পোকা মারার বিষের নাম
মাজরা পোকা দমনের জন্য অনেক বিশ বা কীটনাশক রয়েছে এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সিনজেনটা কোম্পানির মাইনেকটো এক্সটা। আবার ব্যবহার করা যেতে পারে বেল্ট এক্সপার্ট কীটনাশক যা মাজদা পোকা দমনে সাহায্য করে।
মাজরা পোকার জন্য কীটনাশক ব্যবহার করার জন্য কৃষকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবহার করায় ভালো যার ফলে আপনি খুব অল্প সময়ে মাঝরা পোকার আক্রমণ থেকে আপনার ফসকে বাঁচাতে পারবেন। বর্তমানে মাজরা পোকা দমনের জন্য অনেক বিশ বা কীটনাশক রয়েছে যা ব্যবহার করা হয়।
মাজরা পোকার জীবনচক্র
মাজরা পোকা খুব অল্প সময়ে ফসল জমিতে আক্রমণ করতে সক্ষম। ফসল লাগানোর কিছুদিন পরেই মাঝরা পোকার আক্রমণ দেখা যায় যার ফলে ফসলের পাতায় পাতায় মাজরা পোকার আক্রমণ ও ডিম দেখা যায়।
খুব অল্প সময়ের মধ্যে মাজরা পোকা জন্ম বিস্তার করতে পারে যার ফলে পুরো জমিতে মাঝরা পোকার আক্রমণ বেড়ে যায়। দিনের বেলাতে মাজরা পোকা গাছের পাতার তলায় বা নিচে লুকিয়ে থাকে এবং রাতের বেলাতে এরা চলাফেরা করে।
মাজরা পোকার জন্য কিছু কীটনাশক বা বিষ রয়েছে যা প্রয়োগ করলে মাজরা পোকা থেকে ফসল কে রক্ষা করা যায়। মাজরা পোকার জন্য কীটনাশক প্রয়োগ করতে হবে দুইবার ফসল লাগানোর কিছুদিন পর একবার এবং ফসল তোলার আগে একবার।
ফসলের জমির দিকে নিয়মিত খেয়াল রাখতে হবে মাঝরা পোকার সাথে সাথে অন্য পোকা গুলোর। পোকার আক্রমণ দেখার সাথে সাথে সাথে কৃষি অধিদপ্তরে পরামর্শ অনুযায়ী সার প্রয়োগ করতে হবে না হলে খুব অল্প সময়ে ফসল নষ্ট করে ফেলবে পোকাতে।
অনেক সময় নতুন পোকার আক্রমণ হতে পারে যার ফলে কৃষি কর্মকর্তার সাথে আপনার যোগাযোগ থাকা অতি প্রয়োজন। অনেক সময় দেখা যায় একেবারে নতুন পোকা যা কখনো আগে আক্রমণ করেনি বা দেখা যায়নি। আপনার ফসলে যে পোকায় আক্রমণ করুক না কেন আপনি কৃষি কর্মকর্তার সাথে যদি পরামর্শ করে থাকেন তাহলে খুব অল্প সময় আপনার ফসল কে বাঁচাতে পারবেন যেকোনো পোকার হাত থেকে।
মাজরা পোকার আক্রমণ হলে কি করণীয়
জমিতে কখনোই অতিরিক্ত ইউরিয়া সার ব্যবহার করবেন না। নিয়মিত জমি দেখাশোনা করতে হবে এবং মাঝরা পোকার দিকে খেয়াল রাখতে হবে। হাতজাল দিয়ে মত ধ্বংস করে ফেলতে হবে যাতে মাজরা পোকা বৃদ্ধি না পায়।
জমির ভিতরে কিছু দ্রুত পর পর ডালপালা রাখতে হবে যাতে পাখি বসতে পারে এবং পোকা খেয়ে ফেলতে পারে। মাজরা পোকা দমনের জন্য আলোকপাত ব্যবহার করা যেতে পারে যা মাজরা পোকা দমনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত জমিতে যাতায়াত করতে হবে এবং খেয়াল রাখতে হবে যাতে মাজরা পোকার দমন বেড়ে না যায়।
মাজরা পোকা সিনজেনটা কীটনাশক
ধানের চারা লাগানোর ১৫ থেকে ২০ দিন পর ৩০ গ্রাম ভিড়তাকো কিছু পানিতে মিসাল করে পরিমাণ মতো ইউরিয়া সারের সাথে মিশিয়ে পুরো জমিতে এক সমান ভাবে ছিটিয়ে দিতে হবে।
ভীরতাকোর কার্যকারিতা হচ্ছে ৪ থেকে ৫ সপ্তাহ । শিষ ফোটার পর মাজরা পোকা যাতে কোনভাবে ক্ষতি করতে না পারে সেজন্য চারা লাগানোর ৪০ থেকে ৪৫ দিন পর ভিড়তাকো একই নিয়মে দুইবার প্রয়োগ করে নিতে হবে।
ভিড়তাকো সর্বশেষ প্রয়োগ ও ফসল তোলার মাঝখানে ২১-২৫ দিন ব্যবধান রাখা উচিত।
মাজরা পোকার ছবি
ধানে কোন ধরনের পোকামাকড় আক্রমণ করে
- মাজরা পোকা
- পামরি পোকা
- গান্ধী পোকা
- সবুজ পাতাফরিং
- লেদা পোকা
- পাতা মোরা না পোকা
- ঘাসফড়িং
- কূসেক
কালো মাথা মাঝরা পোকা
কালো মাথা মাজরা পোকার ডিমের ওপর কিছুটা মাছের আঁশের মত একটা সাদা আবরণ হয়ে থাকে। যা সাধারণত ডিম ফোটার আগে আস্তে আস্তে গারো রং ধারণ করে।
কালো মাথা মাজরা পোকার মাথায় নিশাচর এবং সকল প্রজাতির মাঝরা পোকার মাথা একই। দিনে এগুলো লুকায়িত থাকে এবং রাতে কালো মাথা মাজরা পোকা চলাচল করে।
মাজরা পোকা চেনার উপায়
মাজরা পোকা পাতার উপর ও নিচে ডিম পাড়ে এবং ডিমের আকার ধূসর বর্ণের হয়ে থাকে।
মাজরা পোকার ডিম ফুটে ক্রীড়া বের হয়ে অল্প অল্প করে কান্ডের ভিতর প্রবেশ করে এবং ভিতরে নরম অংশ গুলো কুরে খাই যা ফসলের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।
মাজরা পোকা শীষ আসার আগে এবং শীষ আসার পরে আক্রমণ করে থাকে। শীষ আসার আগে মাজরা পোকার আক্রমণের ফলে মরাডিগ দেখা দেয় এবং পরে ডিগ টান দিলে সহজেই উঠে চলে আসে।
ভুট্টার মাজরা পোকা দমনের কীটনাশক
ভুট্টার জন্য কার্বোসালফান সর্বোত্তম ব্যবস্থা। ভুট্টা গাছের জন্য সাধারণত মাজরা পোকা অনেক ক্ষতি করে থাকে যা কৃষকের জন্য ক্ষতিকর। মাজরা পোকা দমনের জন্য কিছু কীটনাশক বা বিষ রয়েছে যা ব্যবহারের ফলে মাজরা পোকা দমন করা যায়।
ভুট্টার গাছে সাধারণত কয়েকবার মাজরা পোকা আক্রমণ করে থাকে। সর্বপ্রথম ভোটটা গাছ লাগানোর পর মাজরা পোকা আক্রমণ করে যার ফলে ভুট্টার গাছ অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়ে।
ভুট্টা চাষ করার আগে কৃষি কর্মকর্তাদের সাথে পরামর্শ করে ভুট্টা চাষ করা ভালো যার ফলে আপনি অল্প খরচে ভালো উৎপাদন করতে পারবেন এবং ভুট্টার গাছের রোগব্যাধি কম হবে।
ধানের পোকা দমনে ভেষজ কীটনাশক
ধানের জমিতে অনেক ধরনের কীটনাশক প্রয়োগ করা হয়ে থাকে। পরিবেশের ক্ষতি এড়াতে এবং পরিবেশের জন্য উপকারী ও কম খরচে রোধ করে ভেষজ পদ্ধতিতে তৈরি কীটনাশক।
বর্তমানে ধানের প্রকৃত মানের জন্য ভেষজ কীটনাশক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রাচীনকাল থেকে মানুষ এই ভেষজ কীটনাশক ব্যবহার করে থাকে। ভালো মানের ফসলের জন্য ফসলের জমির এই ভেষজ কীটনাশক ব্যবহার করা হয়ে থাকে এবং এর মূল্য স্বল্প।
ভেষজ কীটনাশক অধিক পরিমানে ব্যাবহার করা জাবে না, ভেষজ কীটনাশক ব্যবহার করতে হয় স্বল্প পরিমাণে যাতে ফসলের উর্বরতা ভালো থাকে।
নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url